সাঁওতালপল্লীতে আগুন : আল-জাজিরার ভিডিও নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় তোলপাড়
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের রংপুর চিনিকলের সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারে ৬ নভেম্বর সাঁওতালপল্লীতে আগুন দেওয়ার এক ভিডিও নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। এই ভিডিওটি সর্বপ্রথম প্রকাশ করে আল-জাজিরা। এরপরই এই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে সোশাল মিডিয়ায়। ভিডিওটিতে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে ইক্ষু খামারের জমি থেকে সাঁওতালদের বসতি উচ্ছেদ করে। এ সময় তাদের বসতঘরগুলো আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ সদস্যরাই এসব বসতিতে আগুন দিয়েছিল বলে প্রথম থেকেই অভিযোগ করছেন সাঁওতালরা। এই ভিডিওতে পুলিশ সদস্যদের এসব বাড়িঘরে আগুন লাগাতে দেখা গেছে। তবে পুলিশ এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এই উচ্ছেদ অভিযানের সময় পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষে তিন সাঁওতাল মারা যান। গুলিবিদ্ধ হন আরও চারজন। সাঁওতালদের ছোড়া তীরে আহত হন ৯ পুলিশ।
আল-জাজিরার ২ মিনিট ২১ সেকেন্ডের ভিডিওর প্রথমে দেখা গেছে, পুলিশ সদস্যরা রাস্তা ধরে সাঁওতালদের বসতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। প্রথম ২০ সেকেন্ড পর দেখা যায় সাঁওতালদের বাড়ির সামনে গিয়ে কয়েকজন পুলিশ সদস্য কাঁদানে গ্যাস ও গুলি ছুড়ছেন। পোশাক পরিহিত পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাদের গায়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট দেখা গেছে। ভিডিওর ৩৫ সেকেন্ডের দিকে দেখা যায় এক পুলিশ সদস্য একটি কুঁড়েঘরের খড়ে লাইটার জ্বেলে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু, লাইটার দিয়ে আগুন লাগাতে পুরোপুরি সফল না হওয়ায় তাকে সাহায্য করতে গোলাপি টি-শার্ট পরা আরেক ব্যক্তি এগিয়ে যান এবং দেশলাই জ্বালিয়ে সাঁওতালদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেন। ভিডিওতে ২ মিনিট ৩০ সেকেন্ডের দিকে দেখা যায়, সাঁওতালদের বসতিতে আগুন লাগলেও তা নেভানোর চেষ্টা করছেন না কেউ। তাদের সামনেই ঘরগুলো আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ৩ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের দিকে দেখা যায়, আগুনে দাউদাউ করে পুড়ছে অনেকগুলো ঘর।
এদিকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ অভিযান প্রসঙ্গে গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি সুব্রত সরকারকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। সে দিন থানা পুলিশ, জেলা পুলিশ, র্যাব সবাই ওই অভিযানে অংশ নিয়েছিল। আগুন নেভোনোর জন্য ফায়ার সার্ভিস খবর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা আসার আগেই সব পুড়ে যায়। পুলিশ সদস্যরা আগুন দিয়েছে এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে সুব্রত সরকার বলেন, পুলিশ আগুন দিয়েছে- এর কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।
অপরদিকে, হামলা, অগ্নিসংযোগ, লুট ও উচ্ছেদ ঘটনায় ১৬ নভেম্বর স্বপন মুরমু নামে এক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সদস্য বাদী হয়ে ৬০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি দেখিয়ে সাঁওতালদের পক্ষে মামলা করেন। এ মামলায় মোট ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে সাঁওতালদের দাবি, তারা স্বপন নামে কাউকে চেনে না।
এ ছাড়া ২৬ নভেম্বর দুপুরে সাঁওতালদের পক্ষে ক্ষতিগ্রস্ত থোমাস হেমরম বাদী হয়ে স্থানীয় এমপি, ইউএনও ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০০-৬০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে থানায় একটি এজাহার দাখিল করেন। এটি এখনও তদন্তাধীন আছে।
এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও গোবিন্দগঞ্জের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ রকম ঘটনায় যারা যুক্ত ছিলেন তাদেরকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে। তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে হবে।