রাজধানীতে আদিবাসী ও নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা তিনটি সংগঠনের যৌথ এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।

সেনানিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, “গাইবান্ধার বাগদাফার্ম এলাকায় যা ঘটেছে, তার নিন্দা জানানোর ভাষাও আমাদের নেই। এরকম একটির পর একটি নিষ্ঠুর, অমানুষিক, অমানবিক ঘটনা দেখে আমাদের শিওরে ওঠা ছাড়া কিছুই করার থাকছে না।

‘একাত্তরের গণহত্যারীদের পাশে সরকারের নাম লেখা হয়ে যাবে’ বলে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, তারা একটি জনগোষ্ঠীকে তাদের জায়গা থেকে উচ্ছেদ করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হত্যা, লুট ও অগ্নিসংযোগসহ সব রকমের উপায় ব্যবহার করেছে, যা ‘গণহত্যার সংজ্ঞার সঙ্গে সম্পূর্ণভাবে’ মিলে যায়।

“সরকারই ঘোষণা দিয়ে দিয়েছে- এদেশে আদিবাসী বলে কিছু নেই। এখন তারা নিজেদের কথার সত্যতা প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছে। যেভাবেই হোক তারা দেশটাকে আদিবাসীহীন করতে চাচ্ছে।”

গত ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রংপুর চিনিকলের জমির দখলকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক কর্মচারিদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষের ঘটনায় এ পর্যন্ত তিন সাঁওতালের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

তবে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলন থেকে ওই ঘটনায় চারজন সাঁওতাল নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। পাশাপাশি ২০ জনের বেশি আদিবাসী নারী-পুরুষ আহত ও বেশি কিছু নিখোঁজ থাকার কথা বলা হয়।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ও নাগরিক সমাজের সম্মিলত দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক সংবাদ সম্মেলন বক্তব্য দেন। তারা সবাই বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি ও আদিবাসীদের অধিকার আন্দোলনের নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, “গাইবান্ধায় যা ঘটেছে তা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ এবং হত্যকাণ্ড। ওই এলাকার সংসদ সদস্যের হাতে রক্তের দাগ আছে, একাধিক হত্যাকাণ্ডের সাথে সে জড়িত, তার বিচার হয়নি।”

ওই এলাকার (গাইবান্ধা-৪) আওয়ামী লীগের সাংসদ আবুল কালাম আজাদ ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাকিল আলম বুলবুলের নেতৃত্বে সাঁওতালদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তবে শাকিল আলম ওই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন জানালেও ঘটনার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেন।

আর সাংসদ আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, তিনি ঘটনার সময় গাইবান্ধায় ছিলেন না। তাকে ফাঁসাতে একটি মহল তার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক প্রচার করেছে।

পঙ্কজ ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, “গণহত্যার দায়ে এদের বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার হওয়া উচিত। যখন রাষ্ট্র দুর্বৃত্তের হাতে চলে যায়, তখন বিচার বিভাগ ছাড়া আমাদের উপায় থাকে না। তাই আমরা বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করছি।”

সংবাদ সম্মেলনে কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, “কয়েকদিন আগে নাসিরনগরে যা ঘটলো তা বর্বরতার চরমতম নিদর্শন। এ নিয়ে নানা রকমের বাদ-প্রতিবাদ করতে করতেই আরেকটি ঘটনা।

“পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে যেরকম রাজাকার, আলবদর থাকতো তেমনি পুলিশের সাথে এখন ছাত্র-যুব বাহিনী দেখা যায়।”

আর এসব সহযোগী বাহিনীকে সাথে নিয়ে পুলিশ ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাজ হলো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে এসব জায়গায় ছুটে যাওয়া। সেটা না করে তিনি একই কথা বলে চলেছেন- ‘কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না’। তিনি কারে ছাড় দেন, আর কারে ধরে রাখেন সেটাই আমরা বুঝি না।”

সংবাদ সম্মেলন থেকে ঘটনা বিচার বিভাগীয় তদন্ত ছাড়াও আরও পাঁচটি দাবি উত্থাপন করা হয়। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে দায়ীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা, হতাহত, ক্ষতিগ্রস্তদের পারিবারিক ক্ষতিপূরণ ও নিজ ভূমিতে আদিবাসীদের বসবাসের নিশ্চয়তা, ঘটনার জন্য দায়ী প্রশাসনকে অবিলম্বে প্রত্যাহার ও মিল কর্তৃপক্ষের দুর্নীতি তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা কাজল দেবনাথ বক্তব্য রাখেন।

আগামী রোববার বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে একটি প্রতিনিধ দল ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।